আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষভাগ বা মার্চের প্রথমে বিধানসভা ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি করতে চলেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। রাজ্যে এসআইআর চর্চার মধ্যেই বৃহস্পতিবার কোলাঘাটে বিধানসভা নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারির সম্ভাব্য দিনক্ষণ জানিয়ে দিয়ে গেলেন উপ-নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ ভারতী। বৃহস্পতিবার কোলাঘাটে এসআইআর প্রস্তুতি নিয়ে তিন জেলার নির্বাচনী আধিকারিক ও বিএলওদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশনের চার সদস্যের প্রতিনিধি দল। ভারতী ছাড়াও বৈঠকে ছিলেন কমিশনের তথ্যপ্রযুক্তি শাখার ডিরেক্টর জেনারেল সীমা খান্না, কমিশনের সচিব এস বি যোশী এবং উপসচিব অভিনব আগরওয়াল। ছিলেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল-সহ অন্য শীর্ষ আধিকারিকরা। কোলাঘাটের বলাকা প্রেক্ষাগৃহে এদিন কমিশন কর্তারা প্রথম বৈঠকটি করেন বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম ও পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক, ইআরও, এইআরও-সহ প্রায় ৩৭০ জন আধিকারিকের সঙ্গে। দ্বিতীয় দফায় ওই তিন জেলার প্রায় ৪৫০ জন বিএলওকে নিয়েও দীর্ঘক্ষণ ধরে বৈঠক করা হয়। সেখানেই উপ-নির্বাচন কমিশনার জানিয়ে দেন, আগামী ফেব্রুয়ারির শেষভাগ থেকে মার্চের গোড়ার দিকে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের সূচি জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে চলেছে কমিশন। তার যথেষ্ট আগেই চূড়ান্ত ভোটার তালিকা তৈরির কাজ শেষ করে ফেলতে হবে। রাজ্যের বর্তমান বিধানসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২৬ এর ৭ মে। তার মধ্যেই ভোটপর্ব ও গণনা শেষ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে মার্চ মাসের তৃতীয় বা শেষ সপ্তাহ থেকেই বাংলায় ভোটপর্ব শুরু হওয়ার কথা। সেই ক্যালেন্ডার মাথায় রেখে এদিন প্রথম বৈঠকে কমিশনের প্রতিনিধিদলের এক সদস্য জানিয়ে দেন, "এসআইআর শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যেই এরাজ্যে বিধানসভা ভোট হতে চলেছে।" এর পরই তিন জেলার প্রস্তুতি কোন অবস্থায় রয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়। সূত্রের খবর, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উত্তর শুনে তাঁদের মন্তব্য, "ওয়েল ডান। গুড!" ভোটার তালিকায় অবৈধভাবে নাম তোলার জন্য আগেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ময়না বিধানসভার ইআরও এবং অন্য এক একজন এইআরওকে সাসপেন্ড করেছিল কমিশন। তার পর থেকে স্বাভাবিকভাবেই এখানে ভোটকর্মীদের মধ্যে ভীতি কাজ করছে। এদিন সেই ভীতি দূর করতে আইটি নেটওয়ার্ক, ফর্ম ফিল আপ থেকে শুরু করে বিএলও অ্যাপস কীভাবে কাজ করবে, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে কমিশনের প্রতিনিধি দলের তরফ থেকে। আগামী সময়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রশিক্ষণেরও আয়োজন চলছে বলে জানানো হয়েছে। বিশেষ করে ৬, ৭ এবং ৮ নম্বর ফর্ম পূরণ নিয়ে দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর পর্ব চলে এদিন। সে সময় ভারতী জানিয়ে দেন, এসআইআর নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়া মাত্রই এ সংক্রান্ত গাইডলাইন জারি করা হবে। তবে বাংলায় 'বিহার মডেল' অনুসরণ করা হবে কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে তিনি কিছু জানাননি।সূত্রের খবর, বৈঠকে কয়েকজন বিএলও-র পক্ষ থেকে এসআইআর করার সময় স্থানীয় স্তরে নানাবিধ বাধার সম্মুখীন হতে পারার আশঙ্কার কথা তুলে ধরা হয়। এ সময় কমিশনজানিয়ে দেয়, যেহেতু একটা টিম হিসাবে কাজ করা হবে, ফলে যে কোনও সমস্যা ঊর্ধ্বতন স্তরে জানালে যথাযথ পদক্ষেপ করতে দেরি হবে না। এদিনের বৈঠক শেষে ঝাড়গ্রামের নয়াগ্রাম বিধানসভার বিএলও জয়িতা রানা সাংবাদিকদের বলেন, "আজকের বৈঠক থেকে আমরা অনেকটাই আশ্বস্ত হয়েছি।" কমিশনের একাধিক সূত্রে যা ইঙ্গিত মিলছে, তাতে কালীপুজো ও ভাইফোঁটা মিটে যাওয়ার অব্যবহিত পরই এ রাজ্যে এসআইআর নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি হতে চলেছে। সেই এসআইআর নিয়ে জনমানসে তৈরি হওয়া বিভ্রান্তি কাটাতে এদিন সংবাদ মাধ্যমের সামনে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) মনোজ আগরওয়ালের স্পষ্ট বার্তা, কোনও বৈধ ভোটারের নামবাদ যাবে না। তিনি বলেন, জেলায় জেলায় ২০০২ সালের ভোটার তালিকার সঙ্গে ২০২৫ সালের তালিকা মেলানোর যে কাজ বা 'ম্যাপিং' চলছে, তাতে প্রায় ৭০ শতাংশ ভোটারের নামের বৈধতা নিশ্চিত হয়েছে। এসআইআর পর্বে এঁদের কোনও নথি জমাদিতে হবে না। বাকিদের ক্ষেত্রে, যাঁরা ২০০২ সালের পর ১৮ বছরে পা দিয়ে ভোটার হয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ১২টি নথির যে কোনও একটি দিলেই হবে। তিনি বলেন, "৮০ শতাংশ সরকারি অফিসার ও কর্মী রয়েছেন। যাঁরা প্রত্যেকেই যোগ্য। তাঁরা নিয়ম মতো সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখে আপলোড করবেন। এর পর বিধানসভা ভিত্তিক এইআরও চেকিং করবেন এবং ইআরও সর্বশেষ সিদ্ধান্ত নেবেন।ফলে ভয়ের কোনও কিছু নেই।" আধার কার্ড নিয়ে তাঁর বক্তব্য, "আইনে এ বিষয়ে যা বলা আছে, তাই মানা হবে।" তবে নথিতে বিহারের ধাঁচে 'সেল্ফ অ্যাটেস্টেড' থাকার বিষয়টি বাংলায় লাগু করা হবে কি না, তা নিয়ে স্পষ্ট কোনও উত্তর এদিন মেলেনি। কমিশনের ব্যাখ্যা, আধার কার্ড একটি পরিচয় পত্র। তা নিয়ে আধিকারিকদের সন্দেহ হলে প্রামাণ্য নথি চাওয়া হতে পারে। এদিন কোলাঘাটে বৈঠকস্থলের প্রবেশপথে সকাল ১১টা নাগাদ কমিশনের আধিকারিকদের ঢোকার মুখে বিক্ষোভ দেখায় পশ্চিমবঙ্গ সনাতন ব্রাহ্মণ ট্রাস্ট। ট্রাস্টের রাজ্য সম্পাদক শ্রীধর মিশ্রর নেতৃত্বে সনাতনী ব্রাহ্মণদের হেনস্তার অভিযোগ তুলে এসআইআর বাতিলের দাবি তোলা হয়। 'নো এসআইআর' লেখা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান চলে। তথ্যসূত্র- সংবাদ প্রতিদিন।
ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে বা মার্চের প্রথমে বিধানসভা ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি, তার আগেই রাজ্যজুড়ে SIR
byMansaram Kar
-