ঘাটালের বন্যা আটকাতে মাস্টার প্ল্যানের নতুন ডিপিআর করতে আজ শিলাবতীর নদীবাঁধে সমীক্ষা

মনসারাম কর, ঘাটাল: মাস্টার প্ল্যানের নতুন ডিপিআর করতে আজ শিলাবতীর নদীবাঁধে সমীক্ষা, ঘাটাল শহরের কৃষ্ণনগর মৌজা থেকে শুরু করে নিশ্চিন্দীপুর মৌজা পর্যন্ত নদী বাঁধ বরাবর একটি সমীক্ষা করা হলো আজ। ছিলেন সেচ জলপথ দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ারগণ এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। জানা গিয়েছে ঘাটাল শহরে শিলাবতীর জল প্রবেশ করা আটকাতে নদী বাঁধ বরাবর একটি ডুয়ার্ফ বাঁধ অর্থাৎ ছোট বাঁধ তৈরি হবে। নদীর জল কমলেই মাস্টার প্ল্যানের কাজ শুরু হবে বলে জানাচ্ছে প্রশাসন। গত সপ্তাহে সেচ মন্ত্রী মানস ভূঁইঞ্যা এই কথায় জানিয়েছিলেন। তিন দিন আগে ঘাটালের বন্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন ডিভিসি এভাবে জল ছাড়ার ফলে ঘাটাল ডুবছে। আজ সমীক্ষায় নেমে ঘাটালের চেয়ারম্যান তুহিনকান্তি বেরা জানালেন যতটা সম্ভব মানুষের ক্ষতি বাঁচিয়ে রুপায়ন করা হবে মাস্টার প্ল্যানের কাজ। চলতি বছরে ৬ বার বন্যায় অতিস্ট ঘাটালের মানুষ, বন্যা এলেই বন্যা নিয়ন্ত্রণের সেই মাস্টার প্ল্যান কবে রুপায়ন হবে সেই নিয়ে জল্পনা শুরু হয় ঘাটালে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মাস্টার প্ল্যান রূপায়নে রাজ্য সরকার প্রথম দফায় ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করার পর মাস্টার প্যান নিয়ে কার্যত ঝড় উঠে যায়, রাজ্য সরকার দ্রুত রূপায়ণের কথা বললেও নদী সংস্কার বা নদীবাঁধের কাজ একচুল হয়নি, প্রাশাসনিক ভাবে কোনো ডিপিআর প্রকাশ করাও হয়নি, এর মাঝেই জমিযট সমস্যা শুরু হয়। সাংসদ দেব উদ্বেগ প্রাকশ করেন এই নিয়ে. তিনি স্পট করে বলেন মাস্টার প্ল্যান রুপায়ন করতে ঘাটালের মানুষর সহযোগীতা লাগবে, সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। জমিজট সমস্যা মুখ্যমন্ত্রীর কানে পৌছাতেই তিনি নির্দেশ দেন নতুন ডিপিআর করে মানুষের যাতে কম ক্ষতি হয় সেই মত প্যান রেডি করতে। সেই নতুন ডিপিআর করতেই এখন সমীক্ষায় চলছে। লোকসভা ভোটে তুরুপের তাস ছিল এই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান, সামনে ফের ২৬ এর বিধান সভা ভোট, কবে ঘাটালের বন্যা নিয়ন্ত্রণের সেই মাস্টার প্ল্যান রুপায়ন সম্ভব হবে তা নিয়ে জল্পনা ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। প্রসঙ্গত ২০২৪ এর লোকসভা ভোটের দোড়গড়ায় ঘাটালের সাংসদ দেব ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে মাস্টার কার্ড খেলেছিলেন। সে এক অন্য কাহিনী। ২৪ এর লোকসাভা ভোটের আগে দেব ঘোষণা করে দিলেন, তিনি আর ভোটে দাঁড়াবেন না। একে একে বিভিন্ন সরকারি কমিটি থেকে পদত্যাগ করে বসলেন দেব। মাথায় যেন বজ্রপাত পড়লো তৃণমূল নেতাদের বিশেষ করে তৃণমূল নেত্রীর। দেবের মতো ভীষণ জনপ্রিয় তারকা বেঁকে বসলে কী হতে পারে তা বেশ বুঝে গিয়েছিলেন নেত্রী মমতা। দলের দুই স্তম্ভ মমতা অভিষেক ডেকে পাঠালেন দেবকে। তাঁর একটাই শর্ত ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান না হলে সাংসদ হয়ে লাভ কী ? ঘাটালের মানুষকে বন্যার হাত থেকে মুক্তি দিতে না পারলে ভোটে দাঁড়িয়ে কী লাভ? দেব পরিষ্কার বলে দিলেন, "ঈশ্বর আমাকে অনেক দিয়েছেন। আমার রোজগারের জন্য সাংসদ হওয়ার দরকার নেই। দলে পরিষ্কার বলে দিলেন দলের কোনও কর্মীকে ঘাটালে দাঁড় করান। আমি ওসবে নেই। আমি রাজনীতি বুঝি না। আমি বুঝি মানুষের জন্য কাজ। আমি সাংসদ হয়ে হিল্লি দিল্লি ঘুরবো আর ঘাটালের মানুষ বন্যার ঘোলা জলে হাবুডুবু খাবে তা আমি দেখতে পারবো না। আমাকে রেহাই দিন" অনড় দেবকে কালীঘাটের বাড়িতে ডেকে পাঠালেন দলনেত্রী মমতা। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের দাবি মেনে নিলেন মমতা। মমতা ব্যানার্জী সেদিন বুঝে গিয়েছিলেন দেব লোকসভা ভোটে না দাঁড়ালে ভুল বার্তা যাবে গোটা রাজ্যে। দলেও প্রভাব পড়বে। মমতা দেবের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হলেন। দ্বিতীয় বারের শেষ লোকসভা অধিবেশনে দাঁড়িয়ে দেব ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে সেই আবেগ ঝরা বক্তব্য তামাম ঘাটালবাসীর মন ছুঁয়ে গিয়েছিল। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে দেব যদি না এতটা সরব হতেন ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান কার্যকর করতে রাজ্য সরকার হয়ত এতটা এগিয়ে আসতেন না। দেবকে নিয়ে যে আরামবাগ সভা থেকে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে ঘোষণা করেছিলেন। ভোট প্রচারে ঘাটালে এসে দেবকে পাশে নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলে ছিলেন এবারের নির্বাচন হবে ঘাটালের মানুষের জন্য ঘাটাল ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের নির্বাচন। দেব বিপুল ভোটে জিতলেন, বাজেটে ৫০০ কোটি টাকাও বরাদ্দ করেছেন মমতা সেই মত মাস্টার প্ল্যান রুপায়ন করা এবং ঘাটালবাসীকে বন্যার হাত থেকে রেহায় দেওয়া এখন শাসক দল ও প্রাশাসনের চ্যালেঞ্জ। নতুন রুপরেখা করে কবে মাস্টার প্ল্যান হয় সেদিকেই নজর ঘাটাল বাসীর। ঘাটাল থেকে মনসারাম করের রিপোর্ট।  



নবীনতর পূর্বতন