ডঃ শিবাজী বসু (অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক): ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে অখণ্ড ভারতবর্ষ দু টুকরো হয়ে যখন ১৯৪৭ সালের ১৫ আগষ্ট স্বাধীন ভারতের জন্ম হলো সেদিন থেকেই নতুন রাষ্ট্র কাঠামো গঠনে যে শব্দটির উপর সর্বাধিক জোর দেওয়া হয়েছিল তা হোল " গণতন্ত্র (Democracy) "। নতুন ভারতের Nation Builders রা নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে উপলব্ধি করেছিলেন স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা দেশে নৈব নৈব চ। নতুন ভারত পরিচালিত হবে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের দ্বারা। কি দেশ, কি রাজ্য এমন কি সমস্ত প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হবে গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে। প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিঙ্কনের সেই বিখ্যাত উক্তি 'Government of the people, by the people and for the people.' অর্থাৎ দেশ বা সরকার পরিচালনায় জনগণের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করা। আরও ভালো করে বললে বলা যায়, নতুন ভারত সরকার হবে, A system of government by the people themselves. গণতন্ত্র কী? কাকে বলে? এই সব তাত্ত্বিক কথায় যাচ্ছি না। ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর নতুন সংবিধান গৃহীত হয়। আর ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে নতুন সংবিধান সারা দেশে চালু হয়। সারা দেশে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫২ সালে। সেই থেকে নিয়মিত সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের কেন্দ্র সরকার গঠিত হয়ে আসছে। সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০২৪ সালে। দেশের প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিকবৃন্দ ভোটাধিকারের সুযোগ নিয়ে ভোট দান করেছেন। ভোটের মাধ্যমে সরকার নির্বাচিত হলেই কি দেশের গণতন্ত্র মজবুত হয়ে যায় ? স্বাধীন ভারতের গণতন্ত্রের বয়স নয় নয় করে ৭৩ বছরে পড়লো। বলা যায়, ‘বৃদ্ধ গণতন্ত্র’। ৭৩ বছরের গণতন্ত্র কি পরিপক্ক হোল না ক্রমশঃ নড়বড়ে হয়ে উঠছে বয়সের ভারে? এই নিয়েই এবারের কলম ধরা ।
নতুন সংবিধান গৃহীত হওয়ার পর প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫২ সালে। স্বাধীন দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে মাত্র ৪৫.৭ শতাংশ নির্বাচক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। মনে রাখতে হবে সেই সময় নির্বাচকদের নূন্যতম বয়স ২১ বছর করা হয়েছিল। সদ্য স্বাধীন দেশে যেখানে অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে সমস্ত নির্বাচক ভোট দানে অংশগ্রহণ করার কথা সেখানে মাত্র ৪৫.৭ শতাংশ নির্বাচক ভোটদানে অংশগ্রহণ করেছিলেন কেন? এ প্রশ্ন থেকেই যায়। যাই হোক তারপর থেকে সংবিধানের নির্দেশ মেনে এ পর্যন্ত ১৮ তম লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় আইনসভার নিম্ন কক্ষ লোকসভার সদস্য নির্বাচনে এ পর্যন্ত কখনই ৬৫ শতাংশের বেশি নির্বাচক অংশগ্রহণ করে নি। ১৯৮৪ সালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকান্ড জনিত আবহাওয়ায় সাধারণ নির্বাচনেও মাত্র ৬৪.১ শতাংশ নির্বাচক ভোট দান করেছিলেন। সর্বোচ্চ ভোট পড়ে ২০২৪ সালের ১৮ তম সাধারণ নির্বাচনে। অর্থাৎ এ পর্যন্ত সর্বশেষ লোকসভা ভোটে ভোট পড়েছে মাত্র ৬৬.৩৩ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ৩৪ শতাংশ নাগরিক দেশ গঠনে বা দেশের সরকার পরিচালনায় অংশগ্রহণ করেন নি। প্রায় ৯৬ কোটি নাগরিকের মধ্যে মাত্র ৬৬.৩৩ শতাংশ নাগরিক ভোট দান করেছেন যা মোটেই কাঙ্খিত নয় ৭৯ বছরের একটা স্বাধীন দেশে। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই সারা দেশ জুড়ে ৭৯ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হবে। দেশ গঠনে বা দেশের সরকার গঠনে কেন এখনও দেশের নাগরিকদের এত অনীহা ? আবার দেখুন দেশের অঙ্গ রাজ্য গুলিতে কিন্তু সমহারে ভোটে অংশগ্রহণ করে নি। বিভিন্ন রাজ্যে ভোট দানের হারেও রকমফের রয়েছে। এই যেমন ধরুন পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, ত্রিপুরা সহ কয়েকটি রাজ্যে বরাবরই ভোটদানের হার সাধারণ গড় ভোট দানের চেয়ে বেশি। ২০২৪ সালে শেষ সাধারণ নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ভোট দানের হার ছিল ৭৯.২৯ শতাংশ। এই পার্থক্যটা হোল কেন? বা হচ্ছে কেন? এমনটা তো হবার কথা নয়। দেশের নাগরিকদের সুশিক্ষিত সচেতন করে তোলার দায়িত্ব কিন্তু দেওয়া হয়েছে দেশের সরকারের হাতে। রাজ্য সরকারগুলিও দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক প্রভাত দত্ত সংগত কারণেই বলেছেন, ‘এখনও রাষ্ট্র তার আইন কানুন নিয়ে দেশের নাগরিকদের কাছে পৌঁছাতে পারে নি। ফলে দেশের বিপুল সংখ্যাক মানুষ দেশের আইন কানুন নিয়ম নীতির বিষয়ে অন্ধকারে’। অর্থাৎ দেশকে শক্তিশালী করতে হলে দেশের মানুষকে আগে শক্তিশালী করতে হবে। ফলে এখনও এই ৮০ বছরের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে একটি রাষ্ট্রের নাগরিকদের হাজারো সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। তাই বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গুনার মিরডাল ভারতকে ‘Soft State’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। এখনও বিপুল সংখ্যক মানুষ শিক্ষার আলো পায়নি। এখনও বিপুল সংখ্যাক মানুষ দু’বেলা পেট ভরে খেতে পায়নি। এখনও কেন প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র সীমার নীচে বাস করেন ? এর জবাব তো দিতে হবে কেন্দ্রের সরকারকে। এত বছর দেশ স্বাধীন হলো কেন এখনও এই প্রশ্নগুলির সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাদের? বলা হচ্ছে গনতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত হয়ে নির্বাচক তথা নাগরিকদের কথা বেমালুম ভুলে যান নির্বাচিত সদস্যরা। এই অভিযোগ একেবারে উড়িয়ে দেবার নয়। ১৯৫২ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের প্রথম কেন্দ্র সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু যেভাবে দেশ গঠনে নিজেকে সপেঁ দিয়েছিলেন তারপর থেকে আর কোনো প্রধানমন্ত্রী বা তাঁর শাসকদল দেশ গঠনে এগিয়ে আসেন নি। তার অনেক কারণ থাকতে পারে। সেই কারণ অনুসন্ধান করতে যাবে কেন একটি প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ? নেহেরুর পর সব কটি শাসকদলের একমাত্র ধ্যান জ্ঞান হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্ষমতা দখল আর ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াই। কীভাবে বিরোধী রাজনৈতিক দলকে কুপোকাত করে ক্ষমতার কুর্সিতে বসা যায় তাই নিয়েই যত চিন্তা ভাবনা শাসকদলের। আমরা লক্ষ্য করেছি কীভাবে নির্বাচনী ময়দানে রাজনীতি, অর্থনীতির বদলে অ-কথা কু-কথার লড়াই হয়। অশিক্ষিত অর্ধ শিক্ষিত নাগরিকদের নানা ভাবে প্রভাবিত করে ক্ষমতায় আসীন হতে চায় রাজনৈতিক দলগুলি। ক্ষমতায় বসেই কেমন চেহারা দাঁড়ায় শাসকদলের ?
এটা হলফ করে বলাই যায়, গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত হয়ে শাসক হয়ে উঠে সৈরাচারী শাসক। ক্ষমতায় বসেই বেমালুম ভুলে যান দেশের মানুষের কথা। নিজেদের ইচ্ছামতো চলাফেরা করেন। ইচ্ছে মতো ট্যাক্স বসায়। ইচ্ছেমতো জিনিস পত্রের দাম বাড়ায়। জনগণের জীবন যাত্রা দুর্বিসহ হয়ে উঠে। একের পর এক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে শীর্ষ স্তর থেকে নিচু স্তরের নেতা কর্মীরা। এর ভুরি ভুরি উদাহরণ মিলবে সেই প্রথম কেন্দ্র সরকার থেকে সব কটি সরকারের আমলে। পিছিয়ে নেই রাজ্য সরকার গুলিও। শাসকদলের বিরোধিতা করলেই কী পরিণতি হয় তা দেশের মানুষ জেনে গিয়েছেন। ফলে এক শ্রেণীর নাগরিক হতাশ হয়ে ভোট দানে বিরত থাকছেন। তাতে অবশ্য দুর্নীতিগ্রস্ত শাসকদলেরই সুবিধা। আসলে আধুনিক যুগে রাজনৈতিক আদর্শ হিসাবে গণতন্ত্র দানা বেঁধে উঠেছিল অষ্টদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইউরোপিয় ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে। সর্বজনীন ভোটাধিকার, স্বাধীন মতামত প্রকাশ ও সংগঠনের অধিকার আর আইনের শাসনই ছিল গণতন্ত্রের রাজনৈতিক আদর্শ। সে সব এখন চুলোয় গেছে। এখন যাতে সবাই ভোট দান করতে না পারে তারই চেষ্টা চলে বা তারই ফন্দি আঁটে শাসক দল। ভোটের আগে ভয় দেখানো থেকে শুরু করে খুন জখম রক্ত ঝরা নির্বাচনের ধর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশিষ্ট লেখক দার্শনিক সম্প্রতি হলবার্গ পুরস্কার প্রাপ্ত গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক তাঁর গণতন্ত্রের রহস্য বইতে বলেছেন, ‘অবশ্যই দেশে বিদেশে প্রায় সর্বত্র নির্বাচনে মারামারি হয়, জবরদস্তি হয়, কারচুপি হয় এবং এই সব অন্যায় বন্ধ করার জন্য যথা সম্ভব পুলিশি চেষ্টা অতি অবশ্যই করা উচিত। সুপরিচালিত নির্বাচন হোল গণতন্ত্রের গণিত। যে কোনও মতবাদকে গণতন্ত্রের গণিত আসন দিতে বাধ্য’। কিন্তু তা হয় কি ? তিনি আরও বলেছেন, ‘শুধু খুন জখম ছাড়া নিয়মানুবর্তী নির্বাচন পরিচালনা করা গেলেই গণতন্ত্র হয় না। আসলে গণতন্ত্রের পার্টিগণিতকে কর্মক্ষম করতে হলে আগে চাই গনতান্ত্রিক সমাজ (Democratic Society)। সেটা তো আজও গড়ে উঠলো না আমাদের দেশে। উল্টে প্রধান প্রধান শাসকদল গণতন্ত্রের বুলি আউড়ালেও বাস্তবে তা কতটুকু মানা হয় তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। গণতন্ত্রের প্রাণবায়ু হোল নির্বাচন। দেশে গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সাফল্য আনতে হলে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যেও গণতন্ত্র থাকা চাই। গণতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যেই অভ্যন্তরীন গণতন্ত্র থাকা বিশেষ প্রয়োজন। বর্তমানে যে দুটি দল কেন্দ্র ও বঙ্গ রাজ্য সরকার চালাচ্ছে সেই দুটি দলের মধ্যেই অভ্যন্তরীন গণতন্ত্র আছে কি? বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জয়ন্তনুজ বন্দোপাধ্যায় তাঁর "ভারতে গণতন্ত্র " নামে একটি লেখায় বলেছেন, ‘কোনও রাজনৈতিক দল যদি বছরের পর বছর অভ্যন্তরীন দলীয় নির্বাচন বন্ধ রাখে, যদি সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের সৈরাচারী মনোনোয়নের মাধ্যমে উপর থেকে নিয়োগ করা হয়, আর যখন নির্বাচন হয় তখনও উপর থেকে সব প্রার্থী চাপিয়ে দিয়ে নির্বাচনকে উপহাসে পরিণত করে, তবে ক্রমোশ সারা দেশেই গনতান্ত্রিক আদর্শ দুর্বল হয়ে পড়তে বাধ্য’। জাতীয় কংগ্রেস থেকে শুরু করে বিজেপি, তৃণমূল কংগ্রেস, আপ বা অন্যান্য দল গুলিতে অভ্যন্তরীন গণতন্ত্রের ছিটেফোঁটাও নেই। এমনকি বামপন্থী দলগুলিতেও সে অর্থে গণতন্ত্র নেই। গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নামে উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয় কর্মকর্তাদের নাম। অর্থাৎ যে দলেই গণতন্ত্র নেই সেই দল ক্ষমতায় এলে কতটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মেনে সরকার চালাবে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়। মিলিয়ে নিন, তৃণমূলের বঙ্গ রাজ্য সরকার বা বিজেপির কেন্দ্র সরকার আইনসভায় কীভাবে জোর করে বা আলোচনা ছাড়া বা স্বল্প আলোচনা করেই কীভাবে বিল পাশ করা হয়। জয়ন্তনুজ বন্দোপাধ্যায় তাই বলেছেন, ‘মৌলিক আত্মনুশাসন না থাকলে গণতন্ত্র বিশৃঙ্খলার রাজনীতিতে পরিণত হবার সম্ভাবনা থেকেই যায়। অদূর ভবিষৎ-এ কি ভারত এই দিকেই যাচ্ছে ? উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, বঙ্গ রাজ্যে বহু সরকারি বা আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান চলছে কোনও নির্বাচন ছাড়াই। স্কুল, কলেজ, সমবায়, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ, মধ্য শিক্ষা পর্ষদ, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি চলছে কোনও গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ছাড়াই। বহু অঙ্গ রাজ্যে ঠিক মতো পঞ্চায়েতি রাজ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আমাদের এই বঙ্গ রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কীভাবে গুন্ডাগিরি হয় তা প্রত্যক্ষ করছেন রাজ্যবাসী। এমনকি বিরোধীদের দখলে থাকা গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদ ভয় দেখিয়ে দখল করেছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস তা তো ইতিহাস। " সব দখল করো " বা সব চাই যে দলের নীতি সেই রাজনৈতিক দল গণতন্ত্র মানে ? অদূর ভবিষৎ এ ভারতবর্ষ গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে থাকবে কিনা এখন থেকেই প্রশ্ন তোলা যায়।
মত প্রকাশকে গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ বলা হয়। সেই মত প্রকাশকে বাধা দিলে গণতন্ত্র মৃত প্রায় হয়ে পড়ে বলে বহু পন্ডিত মানুষ ভবিষৎ বাণী করে গিয়েছেন। যেমন নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত অমর্ত্য সেন বলেছেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিজের জোরেই মূল্যবান। অধিকাংশ মানুষই এই স্বাধীনতা চান। কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গে এই স্বাধীনতা গণতান্ত্রিক রাজনীতির একটা বড় হাতিয়ারও বটে। স্বাধীন ভাবে মতামত প্রকাশের সুযোগ থাকলে মানুষ রাজনীতিতে অনেক বেশি করে যোগ দিতে পারেন, দেনও (ভারত উন্নয়ন ও বঞ্চনা )। কিন্তু আমাদের বর্তমান শাসকদলগুলি মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে গলা টিপে মারতে চায়। তার ভুরি ভুরি প্রমান রয়েছে। বিরুদ্ধ মতবাদীকে হয় খুন নয় গুম করে বা জেল গারদে ভরতে চায় শাসকদল। আমাদের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বিশিষ্ট দার্শনিক সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন বলেছেন, রাষ্ট্রীয় গণতন্ত্রের উদেশ্য হোল রাষ্ট্রীয় অধিকার সম্বন্ধে মানুষের অধিকার স্বীকার করা। আর সামাজিক গণতন্ত্রের উদেশ্য হোল সকল মানুষকে সামাজিক সুবিধাগুলিকে সমান অংশ দেওয়া (Religion and Society) তিনি এই বইতেই বলেছেন, "সংখ্যালঘিষ্ঠদের যদি দাবিয়ে রাখা হয়, তাঁদের মতামত প্রকাশ না করতে দেওয়া হয় তো গণতন্ত্র স্বেচ্ছাচারে পরিণত হয়’। দেশের জনগনকে হীন করে রাখলে গণতন্ত্রের সাফল্য আসে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি টমাস জেফার্ষণ। তিনি ১৮১৯ সালে Adams কে এক চিঠিতে বলেছেন, রোমে গণতন্ত্র ছিল না, কেননা জনসাধারণ হীন ছিল। বিশিষ্ট সাহিত্যিক প্রমথনাথ বিশি খানিকটা ব্যঙ্গ করে বলেছেন, ‘জনগনকে ভোলাবার পক্ষে গণতন্ত্র অতি উত্তম উপায়। কিন্তু যদি তাঁরা (শাসকদল) মনে করে তাঁরাই শাসন ব্যবস্থার কর্তা, তখনই দুর্দিন। মূঢ় জনতা নিজের ভালো মন্দ বোঝে না, অন্য একজনকে তাঁদের হয়ে কাজ করতে হয় -- একেই বলে গণতন্ত্র। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য আমাদের শাসকদল এ সবের ধার ধারে না। তাঁরা সব সময় মূঢ় জনগনকে পিছনের দিকে এগিয়ে যেতে বলেন। এর ফলে আমাদের দেশের ৭৩ বছরের বৃদ্ধ গণতন্ত্র কি সেই পিছনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে? ঠিক যেমন চলমান বাসে উঠলেই বাসের খালাসি বলে উঠেন, পিছনের দিকে এগিয়ে যান !