ড: শিবাজী বসু ( অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক): ♦️ বছর ঘুরলেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। এখন থেকেই রাজনৈতিক দলগুলো লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। এটাই স্বাভাবিক। যে যার মতো করে ঘুঁটি সাজাতে শুরু করে দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে ঢেলে সাজানো থেকে শুরু করে কর্মীদের চাঙ্গা করতে রাজনৈতিক দলগুলি বিভিন্ন কর্মসূচি নিতে শুরু করেছে অনেক আগে থেকেই। লক্ষ্য অবশ্যই রাজ্যের ক্ষমতা দখল। ক্ষমতা দখলের জন্য কোনও চেষ্টারই খামতি রাখতে চায় না শাসকদল থেকে বিরোধী দল। ক্ষমতা দখলের লড়াই বলা হলেও কিছু রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শতকরা ভোটের হার বাড়ানো। যেমন ধরুন এক সময় ক্ষমতায় থাকা বামফ্রন্ট বা কংগ্রেস দল স্বপ্নেও ভাবেনি তাঁরা এককভাবে বা জোট করে রাজ্যের ক্ষমতা দখল করতে পারবে। তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য প্রাপ্ত ভোটের হার বাড়ানো। রইলো বাকি তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি। ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে নামবে তৃণমূল কংগ্রেস, বিজেপি, বামফ্রন্ট, জাতীয় কংগ্রেস সহ আরও কয়েকটি ছোটখাটো রাজনৈতিক দল। মূল লড়াই হবে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে। এখনো পর্যন্ত এটাই স্বাভাবিক চিত্র। তৃণমূল কংগ্রেস ইতিমধ্যেই ঘোষণা করে দিয়েছে তাঁরা ২৫০ এর বেশি আসন নিয়ে রাজ্যে চতুর্থ বারের জন্য ক্ষমতার কুর্শিতে বসতে চলেছে । তাঁদের এবারেও মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে জয়ের ঘুঁটি সাজাতে শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। লোকসভা ভিত্তিক জেলা সভাপতি বদল থেকে সমস্ত গণ সংগঠনের জেলা ভিত্তিক সভাপতি বদল করে নেতা কর্মীদের একটি বার্তা পাঠিয়ে দিয়েছেন রাজ্য নেতৃত্ব। শোনা যাচ্ছে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ব্লক ও পুরসভা ভিত্তিক দলীয় সংগঠনের প্রধানদেরও রদ বদল ঘটাতে চলেছে তৃনমূলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব । কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে বিশেষ করে বিজেপির বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ তুলে মাঠে নেমে পড়েছে তৃণমূল নেতা কর্মীরা। উল্টো দিকে প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টিও পিছিয়ে নেই ক্ষমতা দখলের খেলায়। তাদেরও লোকসভা ভিত্তিক জেলা সভাপতি বদল করা হয়েছে। তবে মন্ডল সভাপতিদের বদলের কোনও সম্ভাবনা আপাতত নেই ভোটের আগে। বিজেপিও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিশেষ করে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে নানান কর্মসূচি নিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে। এই ধরনের কর্মসূচি নিয়ে কেন দুটি দল মিটিং মিছিল করছে তার আর বুঝতে বাকি নেই রাজ্যের মানুষের। অন্যদিকে ২০১১ সালে ক্ষমতাচ্যুত বামফ্রন্ট যেন কিছুটা হতাশাগ্রস্ত হয়ে বারবার চেষ্টা করেও নিজেদের পূর্বের জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি। আসন সংখ্যা সহ প্রাপ্ত ভোটের হার কমতে কমতে একেবারে তলানিতে ঠেকেছে । ফলে কিছুটা হতাশাগ্রস্ত বামেরা বিশাল সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় কংগ্রেস ও আই.এস.এফের মতো দলের হাত ধরার চেষ্টা করেও সুফল পায়নি। তবুও বামেরা তাঁদের জাত চেনাতে মাঝে মাঝেই ব্রিগেড সমাবেশ থেকে শুরু করে মিছিল বা অবস্থান কর্মসূচি নিতে শুরু করেছে। একই অবস্থা জাতীয় কংগ্রেসের। স্বপ্নেও ভাবেনি তাঁরা এককভাবে নির্বাচনে জিতে রাজ্যের কুর্শি দখল করবে। ফলে সিদ্ধান্তে আসাই যায় আগামী ২৬ এর মূল লড়াইটা হবে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে। তাই কোটি টাকার প্রশ্ন এবার রাজ্যের ক্ষমতা দখল করবে কে ? তৃণমূল কংগ্রেস না বিজেপি? এবারের প্রতিবেদন এই কোটি টাকার প্রশ্ন ঘিরেই।
এই মুহুর্তে রাজ্যের যা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক আবহাওয়া তৈরী হয়েছে তায় একটি প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসছে রাজ্যের মানুষ কি ফের পালা বদল ঘটাবে? একের পর এক দুর্নীতি, জোচ্চুরি, খু*ন, ধ*র্ষ*ণ, রাহাজানির মতো ঘটনায় জর্জরিত শাসক দল। এই নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। আদালতের মূল্যায়ন রাজ্যে সরকার মধ্যযুগের বাংলার জমিদারি কায়দায় রাজ্য চালাচ্ছে। আদালতের একের পর এক প্রশ্নের মুখে রাজ্য সরকার ও শাসক দল জেরবার হয়ে পড়ছে। ফলে প্রধান বিরোধী দল থেকে শুরু করে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজ্যে পালা বদলের আশা দেখছেন। এই ভাবাটা কিন্তু অমূলক নয়। এটা ঠিকই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আগামীর নির্বাচনে প্রধান ইস্যু হতে চলেছে শাসক দলের পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি আর অজস্র বেআইনি কাজের ছড়াছড়ি। আগামীর নির্বাচনে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে এই দুর্নীতির জবাবদিহি করতে হবে। এই দুর্নীতির জবাবদিহি করে চতুর্থ বারের জন্য কি তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যের ক্ষমতা দখল করতে পারবে? ক্ষমতায় বসার পর থেকেই একের পর এক দুর্নীতিতে জড়িয়েছে রাজ্যের শাসকদল। এমনকি খোদ রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় শিক্ষক নিয়োগের মতো দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত থেকে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে প্রমাণিত হয়েছে রাজ্য সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি। যা নিয়ে তোলপাড় চলছে রাজ্য রাজনীতি। এরপরও কি শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস আগামীর নির্বাচনে জিতে রাজ্যের কুর্শি দখল করবে? শুধু তো এই শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি নয়, সারদা কেলেঙ্কারি, নারাদা কেলেঙ্কারি, রোজভ্যালির সংস্থায় আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছে তৃণমূল। কামদুনি, পার্কস্ট্রীট ধ*র্ষ*ণ ও খু*ন কান্ড, বগটুই হ*ত্যাকান্ড, আর জি কর হাসপাতালে ডাক্তারি পড়ুয়ার ধ*র্ষ*ণ, খু*ন, কসবার আইন কলেজে ছাত্রীর ধ*র্ষ*ণ নিয়ে রাজ্যে রাজনীতি আলোড়িত হয়েছে গত পাঁচ বছরে। এইসব ইস্যু অবশ্যই ভোট ময়দানে ছাপ ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কিন্তু তা হবে কি? মনে করিয়ে দিই, রাজ্যে পালা বদলের পর একের পর এক দুর্নীতিতে জড়িয়েছে রাজ্যের শাসকদল। তার প্রভাব কি আদৌ পড়েছে তৃনমূলের ভোট ব্যাংকে ? না, একদমই না। আমরা যদি পর পর ভোট চিত্র বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখব দুর্নীতির পঙ্কিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েও দিব্যি ক্ষমতায় বসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা তাঁকে আরও দুর্নীতি করতে সাহস জুগিয়েছে। এবার দেখা যাক, পরপর কয়েকটি ভোটের ফলাফল। প্রথমেই দেখে নিই ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল। এই নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস মোট ২১৫ টি আসন দখল করেছিল। ভোট পেয়েছিল মোট প্রাপ্ত ভোটের ৪৭.৯৪ শতাংশ ভোট। আর প্রধান বিরোধী দল বিজেপি পেয়েছিল ৭৭ টি আসন ও প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৩৮.১৩ শতাংশ। সিপিএম কোনও আসনে জয়লাভ করতে পারে নি। কিন্তু ভোট পেয়েছিল ৪.৭৩ শতাংশ ভোট। জাতীয় কংগ্রেস ভোট পেয়েছিল ২.৯৩ শতাংশ কিন্তু একটিও আসন পায় নি। নতুন দল হিসেবে আই এস এফ একটি আসন দখল করেছিল ও ভোট পেয়েছিল ০.৩৪ শতাংশ। পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি আর কেলেঙ্কারি মাথায় নিয়ে ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে নেমেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। মোট ৪২ টি লোকসভা আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে ২৯ টি আসন । শতাংশের হারে তৃণমূল কংগ্রেস ভোট পেয়েছিল ৪৫.৭৬ শতাংশ ভোট । আর প্রধান বিরোধী দল বিজেপি পেয়েছে ১২ টি লোকসভা আসন। ভোটের হার ছিল ৩৮.৭৩ শতাংশ ।।বাম কংগ্রেস জোট পেয়েছিল ১১.৩ শতাংশ ভোট ।। আসন দখল করেছে মাত্র একটি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ৪২ টি আসনের মধ্যে পেয়েছিল ২২ টি আসন। ভোটের হার ছিল ৪৩.৩ শতাংশ ভোট। আর রকেট গতিতে উঠে আসা বিজেপি পেয়েছিল ১৮ টি আসন আর ভোটের হার ছিল ৪০.৭ শতাংশ। এই বিজেপি মুখ থুবড়ে পড়ে ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে। এই ফলাফল মাথায় নিয়েই আগামী ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনে নামবে বিজেপি। আরও যদি পিছিয়ে যাই ২০১৬ এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ভোট শতাংশ ছিল ১০.৭ । আসন পায় মাত্র ৬ টি। এই নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছিল ৪৪.৯ শতাংশ ভোট আর আসন পায় ২১১ টি। জাতীয় কংগ্রেস ভোট পেয়েছিল ১৩.৩ শতাংশ আর আসন পায় ৪৪ টি । অন্যদিকে বামফ্রন্ট ২৬.৬ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় ৩২ টি । মাঝে পঞ্চায়েত ভোটের কথা আনলাম না কেননা রাজ্য পুলিশের নজরদারিতে এই পঞ্চায়েত নির্বাচনগুলিতে তৃনমূলের গুন্ডাগিরির কাছে এঁটে উঠতে পারে নি কোনও বিরোধী দল। আগামীর ২৬ এর লড়াই কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন। কারণ লাগামছাড়া দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়েই নির্বাচনে নামতে হবে তৃণমূল কংগ্রেসকে। একেবারে নিচুতলার থেকে শুরু করে প্রশাসনের উচ্চ স্তরে সীমাহীন দুর্নীতি, কেলেঙ্কারি আর হিমালয় সদৃশ ঋণের বোঝা মাথায় নিয়েই নির্বাচকদের কাছে ভোট ভিক্ষা করবে শাসকদল। একযোগে সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দল দুর্নীতিকে হাতিয়ার করবে ভোট প্রচারে। পাশাপাশি বিজেপির কেন্দ্র সরকারের চাপও সামলাতে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কারণ তিনিই একমাত্র দলের মুখ। ভাবুন তো সরকারের এমন কোনও দফতর আছে নাকি যেখানে দুর্নীতির অভিযোগ উঠে নি? একদিকে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ আর অন্যদিকে টানা চতুর্থ বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার হাতছানি। তিনি কি পারবেন এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করে রাজ্যের কুর্শিতে বসতে? এই প্রশ্ন নিয়ে বাজি ধরতেই পারেন যে কেউই। মনে রাখতে হবে দুর্নীতির পাহাড় প্রমাণ বোঝা মাথায় নিয়েই ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচন আর ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের বৈতরণী পার করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২৪ এর লোকসভা ভোটে কেউ কি ভেবেছিলেন একটা আগাপাশতলা দুর্নীতিগ্রস্ত দল ২৯ টি আসন দখল করতে পারবে ? একটা দল তৃণমূল কংগ্রেসের দুই শীর্ষ নেতৃত্বের শিক্ষাগত যোগ্যতার জাল সংশাপত্র নিয়ে বিস্তর সমালোচনায় বিদ্ধ ! রাশি রাশি দুর্নীতিকে কোলবালিশ করে নির্বাচনী রাজনীতিতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সাড়ে পাঁচ ফুটের এই মহিলা। এবারেও কি তাই-ই হবে? বঙ্গ রাজনীতির এই মুহুর্তে যা ট্রেন্ড সেই ট্রেন্ড অনুযায়ী আমি হলফ করে বলতে পারি আগামীর নির্বাচনে ভালো সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়েই ফের রাজ্যের মসনদে বসবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন ? কীভাবে ? এবার আসছি এই প্রসঙ্গে।
আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, পূর্ণ দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূল কংগ্রেস নামক দলটির বিরোধীদের মোকাবিলা করতে না পারাটার মধ্যেই লুকিয়ে আছে তৃণমূল কংগ্রেসের সাফল্য। একবার ভাবুন রাজ্যে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই একের পর এক দুর্নীতিতে জড়িয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। সারদা কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে বিভিন্ন চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি, কামদুনির ধর্ষণ খুন কান্ড সহ একাধিক খুন, বগটুই হত্যাকাণ্ড, শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি, একশো দিনের কাজের দুর্নীতি , আর জি কর হত্যাকাণ্ড, কলকাতার আইন কলেজে ছাত্রীর ধর্ষণ কান্ড, বিভিন্ন দফতরে নিয়োগ দুর্নীতি কী নেই ! এতসব মেগা দুর্নীতি আর সরকারি অর্থ অপচয় ও নয়ছয়ের মতো ঘটনায় বিরোধী দলগুলোর ভূমিকা কেমন? শাসকদলকে খানিকটা ব্যতিব্যস্ত করা বা বিড়ম্বনায় ফেলা ছাড়া আর কী করতে পেরেছে কংগ্রেস, বিজেপি সিপিএমের মত বিরোধী দল ? এরই মাঝে বিরোধী দল বিজেপির বেশ কয়েকজন বিধায়ক দল ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের দোসর হয়েছেন। উপ নির্বাচনে জিতে আসা বাম কংগ্রেস জোটের একমাত্র বিধায়ক রাইধীঘির বায়রন বিশ্বাসও তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। এত বড় একের পর এক মহা দুর্নীতি ও অনিয়মের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরও বিরোধী দলের নেতা কর্মীরা তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন কেন ? ফলে বিরোধী সিপিএম, বিজেপি ও কংগ্রেসের নিচুতলার নেতা কর্মীদের মধ্যেই শাসকদলের দুর্নীতি নিয়ে সন্দেহ দেখা দিতে বাধ্য। হয়েছেও। তাহলে একেবারে সাধারণ মানুষের মধ্যে কি এই নিয়ে কোনও প্রশ্ন দেখা দিতে পারে ? আমি আমার বন্ধু সার্কেলের মধ্যে আলোচনা করে দেখেছি শাসকদলের কোনও দুর্নীতি, চুরি চামারি নাড়া দিতে পারে নি সাধারণ মানুষকে। বরং বলতে পারি সাধারণ মানুষের কাছে শাসকদলের এইসব মেগা দুর্নীতি চুরি চামারি ডাকাতির ঘটনা পৌঁছে দিতে পারেনি সিপিএম বিজেপি কংগ্রেস নেতারা। বিরোধী দলগুলির এই মহা "ব্যর্থতা"কে হাতিয়ার করে নাকি রাজ্যের ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখছে ! কলকাতা শহরে আমন্ত্রিত মিডিয়াকুলের সামনে গলার শিরা উপশিরা ফুলিয়ে মিছিল মিটিং করে যেন বিরোধী দলের কিছুটা ভূমিকা পালনের দায় সারছে বিজেপি সিপিএম কংগ্রেস। শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি নিয়ে শাসকদলকে বেকায়দায় ফেলতে পেরেছেন মহম্মদ সেলিম, সুকান্ত, শুভেন্দু, সুজন বা অধীর, শুভঙ্কর? বা আর জি কর কান্ড যেভাবে গোটা মানব সমাজকে নাড়িয়ে দিয়েছিল তার ফায়দা লুটতে পেরেছেন সেলিম সুকান্ত শুভেন্দু? বা বীরভূমের বগটুই গণহত্যা নিয়ে কোনও নাড়া দেওয়ার মতো আন্দোলন করতে পেরেছে বিরোধীরা? তাহলে তারা কিভাবে স্বপ্ন দেখতে পারে রাজ্যের কুর্সি দখল করতে? আসলে একের পর এক দুর্নীতির কাহিনী একটি বৃহৎ কাঁচের জারে সাজিয়ে রেখে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে সেলিম সুকান্ত শুভেন্দু সুজনরা। স্বপ্ন দেখতে তো কারও মানা নেই । উল্টো দিকে একের পর এক দুর্বল বিরোধী দলের বাউন্সারকে হেলায় মাঠের বাইরে পাঠিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুহাত তুলে বলতে পারছেন, এই দ্যাখো I am the greatest batsman all over in West Bengal. মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি একজন অন্যতম সেরা তীরন্দাজ বলতে পারি। কেননা লক্ষীর ভান্ডার থেকে শুরু করে কন্যাশ্রী,সবুজ সাথী, খাদ্যসাথি, ক্লাবগুলোকে লক্ষাধিক টাকার অনুদান স্বরূপ একের পর এক তীর ছুঁড়ে ভোঁতা করে দিয়েছে বিজেপি সিপিএমের দুর্নীতির ইস্যুগুলিকে। লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো বর্ম ভেদ করে শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতির মতো শেল প্রবেশ করতে পারেনি সাধারণ মানুষের রান্নাঘরে। ২৬ যত এগিয়ে আসবে বিরোধীদের কুপোকাত করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঝুলিতে আর কী ভয়ঙ্কর তুন আছে কে জানে ! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেনে গিয়েছেন তেল ও জলের মতো সিপিএম বিজেপি কংগ্রেস কখনই এক হবে না। ফলে যতই বিজেপি বা সিপিএম দুর্নীতির তীর ছুড়ুক না কেন বাহুবলী সিনেমায় প্রভাস হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ হাসিই হাসবেন, এটা নিশ্চিত। পাঠকের মনে হতে পারে আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়েই ব্যাট করছি। না মোটেই না। আমি শুধু ঘটনা তুলে ধরেছি মাত্র। বিরোধীরা এককাট্টা না হলে কোনও মতেই রাজ্যের ক্ষমতা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হটাতে পারবে না। যেমন ২০১১ সালে বামফ্রন্টকে হটাতে তৃণমূল, কংগ্রেস, বিজেপি, এস ইউ সি, নকশাল, মাওবাদী, বাম দলগুলোর মধ্যে সিপিএম বিরোধী বামদল,পুলিশ প্রশাসনের একটি বড় অংশ মিলেমিশে একাকার হয়েছিল। সর্বোপরি মিডিয়াকুলের একটি বড় অংশ নিজেদের চরিত্রকে কলুষিত করে গোপনে মহাজোটে যোগ দিয়েছিল। এসব তো প্রমাণিত। এবারও ২৬ এর লড়াই হবে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কৌশলে নিষ্ক্রিয় করে অনুগত পুলিশ বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে বাজিমাৎ করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। মিলিয়ে নিবেন।
পুনশ্চ : আগামীর নির্বাচনে অবশ্যই বিরোধী দলগুলির হাতে সবচেয়ে বড় ইস্যু প্রশাসনের সর্বস্তরের সীমাহীন দুর্নীতি। প্রতিটি ক্ষেত্রে আদালতে রাজ্যের মুখ পুড়ছে। তাতে কী এসে যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ! বরং যেভাবে তুড়ি মেরে আদালত থেকে কেন্দ্রীয় এজেন্সীর নির্দেশকে উড়িয়ে দিয়েচেন তাতে তাঁর হার না মানা মানসিকতা প্রশংসিত হয়েছে দলের কর্মী সমর্থকদের কাছে। দলের মধ্যে আরও দৃঢ় হয়েছে তাঁর নেতৃত্ব। দ্বিতীয়ত, একেবারে মেঠো ভাষায় কথা বলে যেভাবে আম আদমির মন কেড়ে নিতে পেরেছেন তা অবশ্যই প্রশংসিত। ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কোনও দুর্নীতি করতে পারেন তা এখনও বিশ্বাস করে উঠতে পারেননি বেশির ভাগ মানুষ। ফলে সাধারণ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও তাঁদের ত্রাতা হিসাবে স্বীকৃত ।