ছাত্রীর উপর যৌন নির্যাতন, ২৫ বছরের কারাবাস হলো জামির হোসেন, ফিরোজ হোসেন, রাসেল মিয়ার।
কোচবিহার জেলার শীতলকুচি থানা এলাকা, ২০২১-এর ২১ ডিসেম্বর। কলেজ যাওয়ার পথে জামির হোসেন নামে সিনিয়রের সঙ্গে দেখা ১৯ বছরের এক ছাত্রীর। জামিরের সঙ্গে তার বন্ধু ফিরোজ হোসেন। দুজনেই দাঁড়িয়ে জামিরের মারুতি ওমনি ভ্যানের পাশে। চেনা মুখ, সুতরাং জামির তার গাড়িতে ছাত্রীকে কলেজে পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব দিলে আপত্তি না করে গাড়িতে উঠে পড়ে সে, গাড়ির চালক হয় ফিরোজ।
মাত্র আড়াই কিলোমিটার দূরে কলেজ, কিন্তু সেই সময়ের মধ্যেই ছাত্রীটিকে জোর করে গাড়ির ভিতর আটকে রাখে জামির, এবং দ্রুত শীতলকুচি থানারই অন্তর্ভুক্ত বামুনডগা গ্রামে জামিরের পিসির বাড়ি অভিমুখে ছোটে গাড়ি। ইটভাটায় কাজে গেছেন বাড়ির সকলে, অতএব বাড়ি ফাঁকা। সেখানে তাদের অপেক্ষায় ছিল তাদেরই কলেজের আরেক ছাত্র রাসেল মিয়া, যে ওই ছাত্রীর জুনিয়র।
জামির এরপর মেয়েটির কাছে দাবী জানায় শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের। কিন্তু সে কিছুতেই তাতে স্বীকৃত না হওয়ায় তাকে ধর্ষণ করে জামির, যার ভিডিও করে তার দুই সঙ্গী। এখানেই শেষ নয়। এরপর মেয়েটির উপর যৌন নির্যাতন চালায় বাকি দুজনও, যার ফলে অচৈতন্য হয়ে পড়ে সে। জ্ঞান ফেরার পরে তাকে ফের গাড়িতে তুলে রাস্তায় নামিয়ে দেয় তিনজন, এবং শাসিয়ে যায়, মুখ খুললে গোটা এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে তার ভিডিও। শুধু তাই নয়, প্রাণেও মেরে ফেলা হবে তাকে।
বাড়িতে লোক বলতে সে এবং তার মা। বিপদেআপদে সাহায্য করার বিশেষ কেউ নেই। তাই বাড়ি ফিরে তখনকার মতো ভয়ে চুপ করে থাকলেও তার একদিন পরেই শীতলকুচি থানার দ্বারস্থ হয় সেই মেয়ে। কারণ আর কিছুই নয় -- আবার একবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করে জামির ও তার সঙ্গীরা। এবারেও দাবী সেই একই, সঙ্গে আবার ভিডিও প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকি।
তদন্তের দায়িত্ব পান সাব-ইন্সপেক্টর মণিভূষণ সরকার (বর্তমানে ওসি মেখলিগঞ্জ, কোচবিহার) এবং তৎকালীন মাথাভাঙার এসডিপিও সুরজিৎ মণ্ডল (বর্তমানে ডিএসপি ক্রাইম, পূর্ব বর্ধমান)। তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে দ্রুত জমা করেন চার্জশিট, এবং বিচার চলাকালীন আগাগোড়া তিনজনকেই হেফাজতে রাখতে সক্ষম হন। মামলায় রায় বেরিয়েছে ক'দিন আগেই। দোষীদের ২৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত, সঙ্গে প্রত্যেকের ১ লক্ষ টাকার জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাবাস।