মনসারাম কর: খড়ার শহরের পিতল ও কাঁসা শিল্পের কোনও চিহ্ন আজ আর নেই। সময়ের সাথে সাথে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে ব্রিটিশ আমলের কারখানা। তার পরিবর্তে টিমটিম করছে কয়েকটি থালা বাসনের দোকান। পিতল ও কাঁসা শিল্পের নিপুন কার্যকারিতার উপর ভর করে ১৮৮৮ সালে ব্রিটিশ আমলে গঠন হওয়া এই শহরের মানদণ্ড ছিল একসময় অনেক উপরে। পিতল ও কাঁসা শিল্পের নিখুঁত কাজকর্ম এবং সোনার গহনা তৈরীর সাথে এই শহরের মানুষের জীবনযাত্রা ও উন্নয়নের ধারা ছিল ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই শিল্পকে কেন্দ্র করেই কলকাতা সহ ভারতের অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের খাতায় খড়ার শহরের উজ্জ্বল নাম থাকলেও বর্তমানে তার কোনো অস্তিত্ব নেই। কিভাবে হারিয়ে গেল এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প? উত্তর খুঁজতে গিয়ে এখানকার ৯০ ছুঁই ছুঁই বয়সের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নিরঞ্জন দাসের থেকে জানা যায়, এখানকার পিতল ও কাঁসা শিল্প বহুদিন আগে থেকেই ধীরে ধীরে তার বাজার হারিয়েছে, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে পিতল কাঁসার জিনিস পত্রের বিকল্প হিসাবে বাজারে এসেছে অ্যালুমিনিয়ম এবং স্টিলের বিভিন্ন রকম সস্তা সুন্দর ও সৌখিন জিনিসপত্র। দামের সাথে তাল মিলিয়ে অ্যালুমিনিয়ম ও স্টিলের এই সৌখিন জিনিসপত্র এখন গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে। ফলে একসময়ের দক্ষ ও কুশলী শ্রমিক থাকা সত্ত্বেও চাহিদার ওভাবে এখানকার শিল্পের মন্দা দেখা দিয়েছেল। কলকাতা সহ অন্যান্য জায়গা থেকে কাঁচামাল আমদানি ও উৎপাদিত জিনিসপত্র রপ্তানি বন্ধ হয়েছে। ব্রিটিশ আমলে মহাজন মারফত কলকাতা থেকে জলপথ ও স্থলপথে নৌকা ও গরুর গাড়ির সাহায্যে ঘুরপথে খড়ারে পৌঁছে যেত এই শিল্পের কাঁচামাল। সেই কাঁচামাল চলে যেত খড়ারের বিভিন্ন রোলিং মিলে, এখানে বড় বড় ৩ টি রোলিং মিল ছিল, এই রোলিং মিলেই কাঁচামাল পুড়িয়ে তৈরি করা হোত পিতল ও কাঁসার উন্নত মানের ব্যবহারিক জিনিসপত্র। তারপর সেই তৈরি হওয়া জিনিসপত্র পুনরায় রপ্তানি করা হোত কলকাতা নগর সহ বাংলাদেশ এবং বিহারের বিভিন্ন জায়গায়। আজ এই শহরে সেই পিতল কাঁসা শিল্পের ইতিহাস এখন অতীত। ব্যবসা ও চাকরির খোঁজে এখানকার অনেক সংখ্যক মানুষই বর্তমানে অন্য শহরের স্থায়ী বাসিন্দা। সোনার গহনা তৈরীর দক্ষ কারিগররাও বাসা বেধেছে উড়িষ্যা সহ অন্যান্য রাজ্যে। তার প্রভাব পড়েছে এখানকার জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও। জনগণনা অনুযায়ী থমকে দাঁড়িয়েছে এখানকার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার।
এলাকার খবর আমাদের সরাসরি জানাতে ফোন বা WhatsApp করুন 9647180572 নম্বরে। নিচের লিঙ্কে টাচ করে ঘাটাল রিপাবলিক টিভি ডিজিটাল মিডিয়ার WhatasApp গ্রূপে যোগ দিন 👇