পথের কাঁটা সরাতেই দ্বিতীয় স্ত্রীকে গলা কেটে খুন, ১০ দিন পর গ্রেফতার গুণধর স্বামী, গোটা চিত্রনাট্য হার মানাবে সিনেমাকেও

মনসারাম কর, সাংবাদিক, ঘাটাল: (মো- ৯৬৪৭১৮০৫৭২):  সেদিন সাত সকালেই গ্রামীণ মেঠো রাস্তার পাশে গলার নুলি কাটা অবস্থায় অজ্ঞাত পরিচয় মহিলার মৃতদেহ উদ্ধারে চমকে গিয়েছিলেন চন্দ্রকোনার মানুষজন।  মহিলার হাতে ছিল এয়ো বধূর শাঁখা-পলা, মাথায় সিঁদুর। পথের কাঁটাকে সরাতেই যে এই নৃশংস খুন, সেদিন বুঝতে পারেননি এলাকার মানুষজন। মহিলার পরিচয় খুঁজে বের করে খুনের ঘটনার জাল গোটাতে পুলিশের সময় লাগে প্রায় ১০ দিন। পুলিশ খুনিকে গ্রেফতার করে বর্তমানে তদন্তের স্বার্থে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। কিন্তু গোটা ঘটনার পিছনে লুকিয়ে রয়েছে এক অদ্ভুত চিত্রনাট্য। বাস্তবের এই কাহিনী হার মানাবে সিনেমাকেও। এই ঘটনায় পুলিশের বড় সাফল্য। মহিলার দেহ উদ্ধারের পর প্রথম কয়েকদিন তাঁর পরিচয় জানতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। কারণ ওই মহিলার বাড়ি ছিল উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে। নাম শ্রীমতী বর্মন। মহিলার বাপের বাড়ি ওই জেলার হেমতাবাদের মাহিপুরে। বয়স প্রায় ৩০ -৩২ বছর। দু'বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর ফের স্বপ্নের সংসার গড়তে চন্দ্রকোনার বালা গ্রামের সৌরভ বেহেরার প্রেমে পড়ে তাকে বিয়ে করেন ওই মহিলা। দু'জনের পরিচয়ের মাধ্যম ছিল মুঠো ফোনের জনপ্রিয় ফেসবুক। ধৃত সৌরভকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, সৌরভ তার প্রথম বিবাহিত স্ত্রী এবং সন্তানদের কথা গোপন রেখে প্রেমের জাল বুনেছিল এই স্বামীহারা মহিলার সাথে। ফেসবুকে প্রথমে আলাপ, তারপর প্রেম বিনিময়। পরে দেখা এবং মহিলার দেওয়া বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়ে তাঁকে স্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া। সবটাই প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের গোপন রেখেই তলে তলে করে নেয় গুণধর সৌরভ।  জানা গিয়েছে, সৌরভ তার প্রথম স্ত্রী ও দুই সন্তানকে মেদিনীপুরের ভাড়া বাড়িতে রেখে কয়েকমাস সে চন্দ্রকোনার বালা গ্রামের মামাবাড়িতে থাকতো।মাঝে মধ্যেই উত্তর দিনাজপুরে গিয়ে সঙ্গ দিতো দ্বিতীয় স্ত্রীকে। পরে মহিলার দাবীমত  উত্তর দিনাজপুর থেকে স্ত্রী শ্রীমতি বর্মনকে সে বালা গ্রামের মামাবাড়িতে নিয়ে আসতে বাধ্য হয়। কিন্তু স্বপ্নের সংসারে তাল কাটে স্বামীর বাড়িতে এসে শ্রীমতী বর্মন যখন জানতে পারেন সৌরভ আগেই বিবাহিত এবং স্ত্রী-সন্তান রয়েছে।  শুরু হয় উভয়ের মধ্যে বাক-বিতন্ডা। তদন্তকারীদের মতে ,তারপরেই পথের কাঁটাকে সরিয়ে দিতে দ্বিতীয় স্ত্রীকে সাফ করে দেওয়ার পরিকল্পনা আঁটে সৌরভ। গত ২৯ আগস্ট রাতের অন্ধকারে এক প্রলোভন দেখিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী শ্রীমতী বর্মনকে নিয়ে যায় চন্দ্রকোনার কুঁয়াপুর এবং বালা গ্রামের সংযোগকারী শুনশান মাঠে। সেখানেই ওই মহিলার গলার নুলি কেটে দেয় সৌরভ। মৃত্যু নিশ্চিত করতে সৌরভের সহযোগী কেউ ছিলো বলেও পুলিশ জানতে পারে।  সৌরভকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে চাই পুলিশ।  অপরদিকে,মহিলার খুনের ঘটনা শুনে উত্তর দিনাজপুরের বাপের বাড়ির লোকজন ভিরমি খান। তাঁরা জানতেন ,তাঁদের মেয়ে ভালোবেসে সংসার করছেন সৌরভের সাথে। কিন্তু ভেতরে এত কিছু ঘটনায় কার্যত স্তম্ভিত তাঁরাও।



নবীনতর পূর্বতন