আদিবাসী সংগঠনের ডাকা বাংলা বনধে স্তব্ধ দুই মেদিনীপুর, গড়ালো না গাড়ির চাকা, শুনশান রইল রাস্তাঘাট, স্তব্ধ জনজীবন।

মনসারাম কর,সাংবাদিক(মো: ৯৬৪৭১৮০৫৭২):  আদিবাসী সংগঠনের ডাকা বাংলা বনধে ব্যাপক প্রভাব পড়লো সারা রাজ্যের সাথে দুই মেদিনীপুরে। আদিবাসীদের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাস্তায় নামে আদিবাসীরা। দুই জেলার নির্দিষ্ট  জনবহুল রাস্তার মোড়ে-মোড়ে অবরোধে সামিল হন তাঁরা।  মেদিনীপুরের কেরানিতলা, খড়গপুরের চৌরোঙ্গী, গড়বেতা, হুমগড়, ক্ষীরপাই, দাসপুরের বকুলতলা, নাড়াজোল, চন্দ্রকোনারোড, এগরা, দাঁতন, পটাশপুর, বেলদা সহ নানান রাজ্যসড়ক অবরোধ করে দেয় আদিবাসীরা। সংগঠনের জেলা নেতৃত্বরা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, যাত্রীবাহী বাস সহ পণ্যবাহী মালগাড়ি কিছুই চলতে দেওয়া হবে না। সেই মত গতকাল বাস মালিকরাও বাস চালানো বন্ধ রাখে দুই জেলার প্রায় সবকটি রুটে। বনধে ছাড় দেওয়া হয় অ্যাম্বুলেন্স সহ কিছু এমার্জেন্সি যানবাহনকে।  সকালের দিকে কিছু পণ্যবাহী ট্রাক রাস্তায় দেখা গেলেও পরে সেগুলিকে আটকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মোড়ে। রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ করার পাশাপাশি বেলা গড়ানোর সাথে সাথে বেশ কিছু সরকারি অফিসের গেটে তালা লাগিয়ে দেন বনধ সমর্থনকারীরা।  সব মিলিয়ে সামগ্রিকভাবে স্তব্ধ হয়ে পড়ে স্বাভাবিক জনজীবন। এদিন বনধের কথা জেনে রাস্তায় বের হননি অনেকেই। অনেকে আবার প্রয়োজনীয় কাজে রাস্তায় বেরিয়ে সমস্যায় পড়েন। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় এদিন সরকারি বেসরকারি অফিসের অনেক চেয়ার ফাঁকা ছিল।  রাস্তায় বের হতে দেখা যায়নি রাজনৈতিক দলের হেবিওয়েট নেতা মন্ত্রী আমলাদের। বনধ ঘিরে সরকারি অফিস সহ রাস্তায় পুলিশ পিকেটিং ছিল নজরকাড়া। 


বনধ প্রসঙ্গে আদিবাসীদের যৌথ সংগঠন “ইউনাইটেড ফোরাম অফ অল আদিবাসী অরগানাইজেশান অফ ওয়েষ্ট বেঙ্গল” এর দাবি,কুড়মি জনগোষ্ঠীরা তপশিলি উপজাতিভুক্ত অর্থাৎ আদিবাসী তালিকাভুক্ত নয়। কিন্তু রাজ্য সরকার তাঁদের আন্দোলনকে উৎসাহিত করছে। কুড়মিদের সাপোর্ট করছে। এ বিষয়ে আদিবাসী সংগঠন ভারত জাকাত মাজি পরগনার পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সহ সভাপতি বলেন, কুড়মিরা আদিবাসি নয়, তবুও তাঁদের দাবি মান্যতা পাবে কি না তার জন্য সংশ্লিষ্ট বোর্ড রয়েছে, ভারতীয় আইন রয়েছে। কিন্তু  রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা একদিকে কুড়মিদের বলছেন, তাঁদের পাশে আছি আবার  অন্যদিকে আদিবাসীদের কাছে বলছেন কুড়মিদের দাবি সঠিক কি না তা কেন্দ্রের বিষয়। তাই সেটা যদি কেন্দ্রের বিষয় হয় তাহলে রাজ্য সরকার তাদের উৎসাহিত করছে কেন? তাই আগামীদিনে কুড়মি জনগোষ্ঠী এবং আদিবাসীদের মধ্যে সংঘাত বাঁধার আশঙ্কা রয়েছে। তাই রাজ্য সরকার তাদের অবস্থান পরিষ্কার করুক। মনোরঞ্জন বাবু আরো বলেন, রাজ্য সরকার যদি কুড়মিদের দাবিকে সমর্থন করে তাহলে আগামী নির্বাচনে এর ফল ভালো হবে না। তিনি বলেন, গতকাল কিছু সাধারণ মানুষের সমস্যা হয়েছে তার জন্য আমরা দুঃখিত। যদিও কুড়মিদের আদিবাসী হওয়ার আন্দোলন বিষয়ে রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভূঁইয়া সহ অনেকেই এদিন বলেন কুড়মিদের দাবির বিষয়টা সম্পূর্ণ কেন্দ্রের বিষয়,এখানে রাজ্য সরকারের কোনও ভূমিকা নেই।  এ বিষয়ে রাজ্যের বিরোধী দল তথা কেন্দ্রের ক্ষমতায় থাকা বিজেপির দাবি কুড়মিরা আইনত ভাবে যদি আদিবাসী হয় হবে, দলীয় ভাবে তাঁদের আন্দোলনকে সমর্থন করার কিছু নেই।   


প্রসঙ্গত বেশ কয়েক বছরের মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার আদিবাসীদের ডাকা বনধে ব্যাপক প্রভাব পড়ল গোটা রাজ্যে। বিগত কয়েকটি রাজনৈতিক দলের ডাকা বনধের বিরোধীতা করে রাজ্যসরকার নির্দেশিকা জারি করলেও এদিন আদিবাসীদের ডাকা বনধ নিয়ে পূর্বের মত কোনো নির্দেশিকা জারি করা হয়নি। সামগ্রিকভাবে এদিকে কুড়মি জনগোষ্ঠীর আদিবাসী হওয়ার আন্দোলন, অপরদিকে আদিবাসীদের তার বিরোধীতা করা নিয়ে চরম চাপানউতোর চলছে রাজ্যে।



নবীনতর পূর্বতন