মনসারাম কর: সাংবাদিক, (৯৬৪৭১৮০৫৭২): বিজেপি কর্মী তন্ময় সামন্ত। দলীয় পতাকা বাঁধবেন গাছের ডালে। সঙ্গে সিঁড়ি নেই। পাশের তৃণমূল কর্মী বাড়ি থেকে এনে দিলেন সিঁড়ি। শুধু তাই নয়, সিঁড়ি ধরে পতাকা লাগাতে সহায়তা করলেন। তন্ময়বাবু বলেন, আমাদের এখানে মানুষ শেষ কথা, দল দেখে কেউ মানুষ বিচার করে না। আমরাও তৃণমূল ও সিপিএমের বন্ধুদের পতাকা বাঁধতে সহযোগিতা করি।
দাসপুর-২ ব্লকের জোৎঘনশ্যাম
গ্রাম পঞ্চায়েতের মতো বিভিন্ন গ্রামেই রাজনৈতিক
সম্প্রীতির এই চিত্র আকছার দেখা যায়। যা রাজ্যবাসীকে হতবাক করবে। শুধু গ্রাম নয়, বিভিন্ন
দলের ব্লক নেতৃত্বের মধ্যেও রাজনৈতিক সদ্ভাব চোখে পড়ার মতো। ভিন্ন
রাজনৈতিক দলের নেতা নেত্রীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে একসঙ্গে বসে চা-মুড়ি খেয়ে
খোশগল্পে মাতেন। ভোটের
দিন একে অপরের বুথ ক্যাম্পে বসে পাতপেড়ে খায় সিপিএম, তৃণমূল ও বিজেপির কর্মীরা।
দল ভিন্ন হলেও মত অভিন্ন। গর্বের
রাজনৈতিক সম্প্রীতি রক্ষায় বদ্ধপরিকর যুযুধান সব রাজনৈতিক দলের
প্রতিনিধিরা । রাজনৈতিক হানাহানির
চরম বাস্তবতার মধ্যে, কার্যত মরুভূমিতে মরুদ্যান দাসপুর।
এরাজ্যে রাজনৈতিক
হিংসা নতুন
নয়। বাম জমানা থেকেই ভোট মানেই বোমা,গুলি,ছাপ্পা, সায়েন্টেফিক রিগিং ও খুনোখুনির অভিযোগ।
শুধু
রাজ্য কেন পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর, পিংলা,সবংয়ে সন্ত্রাসের কম ঘটনা ঘটেনি।
এবারও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে ভাঁঙড় সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত রণক্ষেত্রের
চেহার নিয়েছে। ভোট ঘোষণার পর গত ১৯ দিনে ১১ জনেকে খুনের অভিযোগ উঠছে রাজ্যজুড়ে। কিন্তু সেই আবহে দাসপুর-২ ব্লকের ১৪
টি গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যত
বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। যেখানে বোমা-গুলির শব্দ দূরের কথা, রাজনৈতিক কারণে লাঠি হাতে তেড়ে যাওয়ার ঘটনাও খুঁজে পাওয়া দায়। কেন্দ্রীয়
বাহিনী নিয়ে রাজ্য জুড়ে এত মাতামাতি হলেও
ভ্রুক্ষেপ নেই দাসপুরের। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই বিরোধীদের। এবারও মনোনয়নপত্র জমা দিতে বিরোধীদের বাধা দেওয়া দূরের কথা শাসক বিরোধী ঘন্টার পর ঘন্টা চায়ের
আসরে খোশ গল্পে মেতেছেন।
বিজেপির
ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক তথা দাসপুরের জোৎঘনশ্যাম গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা প্রশান্ত বেরা বলেন, এই রাজনৈতিক সম্প্রীতির
ঐতিহ্য আমাদের গর্ব। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন সমস্ত দলের প্রতিনিধিরা একই জায়গায় বসে চা খেয়েছি। বিভিন্ন
দলের বুথ কর্মীরাও একই চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেয়। ভোটের দিন সবাই সবার ক্যাম্পে খায়। এখানে নীতিগত লড়াই আছে। আদর্শের ভিন্নতা আছে। কিন্তু মারামারি ও হিংসা নেই।
আসলে এখানে সমস্ত দল মানুষের হাতে
ফলাফলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা ছাড়ে। নিজেরা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়না। আমরা এই ঐতিহ্য এগিয়ে
নিয়ে যাব। সিপিএমের সোনাখালি এরিয়া কমিটির সম্পাদক অমল ঘোড়ই বলেন, বাম জমানা থেকে এই ব্লকে রাজনৈতিক
সম্প্রীতির পরম্পরা চলছে। এখানে মানুষের রায় শেষ কথা। রাজনৈতিক দল তাঁদের কথা
বলবে। নীতিগত লড়াই হবে। কিন্তু দিনের শেষে সবাই একই জায়গায় বসে চা খাওয়া ও
গল্প হবে। এই ব্লকে রাজনৈতিক
হিংসার কোনও জায়গা নেই। কেন্দ্রীয় বাহিনীর আসা কিংবা না আসায় এখানে
বিশেষ কোনও ফারাক পড়বেনা। তৃণমূলের ঘাটাল
সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা জোৎঘনশ্যামের বাসিন্দা আশিষ হুদাইত বলেন, বহু সময় সিপিএম কর্মীরা তাদের বুথ ক্যাম্পে খেতে ডেকেছে। নির্ধিদায় সেখানে খেয়েছি। সকলেই তো আমরা দাসপুরের।
প্রত্যেকেই পরিচিত। কেন হিংসা, মারামারি হবে বলুনতো? রাজনীতি নীতির লড়াই। বুদ্ধির কৌশলে সবাই জিততে চাইবে। কেউ জিতবে, কেউ হারবে। যিনি জিতবেন তিনি সকলের উন্নতির চেষ্টা করবেন। বিরোধীরা ভুল ধরবে। বাম জমানা থেকে আমাদের ব্লকে এই ঐতিহ্য চলছে।
আমরা এই পরম্পরা এগিয়ে
নিয়ে যেতে বধ্যপরিকর। এই ব্লকে বিরোধীরা
কোনও দিন সন্ত্রাসের অভিযোগ করতে পারেনা। এই সংস্কৃতি আশপাশের
ব্লকে ছড়ানো যায়না? হেঁসে বলেন, দাসপুরের মাটি সহাবস্থানের। এখানে, সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।