প্রধানের কাজ সামলে চাটাই বসেই দুসপ্তাহ, উচ্চশিক্ষিত এই রাজনৈতিক নেতাই তো জননেতা, সাড়া এলাকায়।

পম্পা মাজি, প্রতিনিধি, ঘাটাল: প্রধানের কাজ সামলে চাটাই বসেই দুসপ্তাহ, উচ্চশিক্ষিত এই রাজনৈতিক নেতাই তো জননেতা, সাড়া এলাকায়। রাজনীতিতে নেতৃত্বের ভূমিকা অপরিসীম। একজন সৎ, কর্মিবান্ধব, দক্ষ জনপ্রিয় যোগ্য নেতা, সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারেন।  আবার ক্ষমতার অপব্যবহারকারি অযোগ্য হাইব্রিড নেতা, মূর্খ নেতা তাদের চামচামির নোংরামি কারণে রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট করে দেয়, এবং দেশে সামজের জন্য ভয়ংকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। বর্তমান রাজনীতিতে দুই ধরনের নেতৃত্বের মধ্যে প্রথম গুনাবলীর নেতার সংখ্যা খুব কম। আজ তুলে ধরবো রাজনীতির এই নেতার কথা যিনি শুধু কথা নয়, সামর্থমত কাজ করে  নিজেকে প্রমাণ করেন। এমন নেতৃত্বের জন্যই হইত তো দেশের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন দেখে। উচ্চ শিক্ষিত ঘাটালের এই যুবক নেতার প্রধানের কাজ সামলে চাটায় বসেই কাটছে দু সপ্তাহ, নাম কৌশিক জানা। ঘাটালের সুলতানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বর্তমান প্রধান।  পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার টি মহকুমার মোট ২৯০ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে এখন বিজেপির দখলে রয়েছে মাত্র চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত। তার মধ্যে ঘাটালের সুলতানপুর গ্রাম পঞ্চায়েত বিজেপির দখলে। প্রাধনের নাম কৌশিক জানা। সদ্য কলেজ পাশ করেই রাজনীতিতে পা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘাটাল মহকুমার মধ্যে সব থেকে কম বয়সী গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান। যুবক বয়সে কাজেও খাদ নেই। নেই পিছুটান। নিজের খরচ চালাতে প্রধানের কাজ সামলে গৃহশিক্ষকতা তাঁর পেশা। পোশাক বা আবভাবে বিলাসিতা নেই। নেই কোনো নেশাভান। তবে নেশা একটাই তা হলো কাজের নেশা, মানুষের কাজে ছুটে যাওয়ার নেশায় মগ্ন তিনি। চলতি নভেম্বর মাসের শুরু থেকে SIR আবহে প্রধানের কাজ সামলে চাটাই বসেই দু-সপ্তাহ কাটছে প্রধান কৌশিক জানার। গোটা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার গ্রামে গ্রামে গিয়ে চাটায় বসে লাগাতার SIR ফর্ম পূরণ করার কাজে সহায়তা করে চলেছেন কৌশিকবাবু। শিক্ষাগত যোগ্যতায় স্নাতক উত্তীর্ণ হওয়ায় অফিসিয়াল ফর্ম পূরণ বা অফিসের কাজে সুলতানপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার যে কোনো দলের রাজনৈতিক নেতৃত্বেকে তিনি পিছনে ফেলার দক্ষতা রাখেন। অনেকেই সেই কথা বলে থাকনে। বর্তমান সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে কম্পিউটার সোশ্যাল প্লাটফর্মে সম্যক জ্ঞানে ভরা কৌশিকবাবু।  কৃষিপ্রধান এলাকায় মানুষের সাথে উচ্চ স্বরে বা কু-কথায় কথা বলা এই নেতার বৈশিষ্টে নেই। আর এই ব্যবহার আর কর্মদক্ষতা থেকেই গত পঞ্চায়েত ভোটে নির্দল থেকে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে পরে বিজেপির হয়ে প্রধান পদে তিনি। তাৎপর্যপূর্ণভাবে গত পঞায়েত ভোটে সুলতানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ২১ জন নির্বাচিত পঞ্চায়েত মেম্বারের মধ্যে ১০ জন জয়ী হন তৃণমূলের এবং ১০ জন জয়ী হন বিজেপির। সেই সময় এই নির্দল জয়ী প্রার্থীর উপরেই নির্ভর করে পঞায়েত বোর্ড কোন দলের দখলে যাবে। পরে তিনি শাসক দলের খাতায় না গিয়ে বিজেপির হাত ধরেন। তার কারণ তিনি নির্দল থেকে দাঁড়ালেও কলেজ লাইফ থেকেই বিজেপির সমর্থনে কাজ করেছেন এবং নেতৃত্ব দিয়েছেন। অল্প সময়ের ব্যবধানে রাজনীতির ময়দানে প্রসংশা কুড়িয়েছেন। তৃণমূলেরও অনেকে তাঁর কাজের প্রশাংশা করে থাকেন ঘনিষ্ঠ মহলে।  সাম্প্রতিক এক অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে প্রধান কৌশিকবাবুকে বলতে শোনা যায়, “ আমি বিরোধী দলের প্রধান, মাত্র আড়াই বছর দায়িত্বে এসে গ্রাম পঞ্চায়েতের সব সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা আমার নেই। এই পঞ্চায়েত এলাকার প্রত্যেক গ্রামে অনেক সমস্যা রয়েছে আমি জানি, অনেক রাস্তা বিগত ১০ বছর ধরে খারাপ, অনেক জায়গায় পানীয় জলের সমস্যা, দীঘদিন শাসক দলের হয়ে যাঁরা পঞ্চায়েত প্রশাসন চালিয়েছেন তাঁরা সেসব কাজগুলো দেখেননি, মাত্র আড়াই বছরে অঞ্চলের যা ফান্ড আসছে তা সব গ্রামে চারিয়ে কাজ করার চেষ্টা করে চলেছি। এই পঞ্চায়েত বিজেপির দখলে থাকায় উপর তলা অন্য এলাকার মত এটাকে দেখে না। যেটুকু টাকা আসে তা থেকে কাজগুলো সার্বিকভাবে চলছে”।  সেদিন প্রধানের এই সোজা সাদা কথায় হাততালি পড়েছিল ভালোই। কারণ এলাকার মানুষের কাছে তাঁর কাজের স্বচ্ছতা তাঁকে এগিয়ে রেখেছে অনেকটা। রবিবার চাটায় বসে  SIR ফর্ম পূরণ করছিলেন তিনি, তাঁকে গোল করে ঘিরে বসে কৃষক পরিবারের প্রত্যন্ত গ্রাম খেটেখাওয়া মানুষগুলো। সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরায় উঠে আসে সেই ছবি। জানা যায় সংশ্লিষ্ট বিএলও বাড়িতে ফর্ম বুঝিয়ে দিলেও ওই ফর্ম ফিলাপের মর্ম সবাই বোঝেন না। তাই ফর্ম ফিলাপ নিয়ে দোলাচলে অনেক পরিবার, তাই পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে চাটায় বসে দু সপ্তাহ ধরে কলম চালিয়ে চলেছেন কৌশিকবাবু। অনলাইনে ভোটার তথ্য তিনি নেজেই ফোন থেকে বের করে নিতে পারদর্শি, তাই সুবিধা হচ্ছে ভোটারদের। সামনে যেতেই কৌশিকবাবু  মুচকি হেঁসে বললেন, ‘এলাকার বেশিরভাগ মানুষ কৃষক, যুব সমাজের অনেকেই কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। আর যাঁরা এই ফর্ম পূরণ করতে পারেন তাঁরাই আর কত মানুষের সহায়তা করবেন, সংখ্যাটা তো অনেক। তাই জানি বলে করে দিচ্ছি। আর অন্যরা যাঁরা করছেন তাঁরাও ভালো কাজ করেছেন,’ সাংবাদিকের প্রশ্ন এটাতে কী কোনো রাজনৈতিক মাইলেজ মিলবে বলে মনে করেন? উত্তরে প্রধান বলে উঠলেন,যাঁরা রাজনীতি করেন তাঁরা যদি সব কাজে রাজনৈতিক মাইলেজ খুঁজে কাজ করেন তাঁরা রাজনৈতিক নেতা হতে পারেন না, অল্প সময়ের ব্যবধানে তাঁরা ময়দান ছেড়ে চলে যাবেন। আমি কাজ করতে এসেছি মায়দান ছেড়ে যেতে আসিনি’। কৌশিকবাবুর এই মনোভাব তাঁকে অনেকটা এগিয়ে দিতে পারে। যে কোনো রাজনৈতিক দলের কাছে তিনি যোগ্য নেতৃত্ব হতে পারেন তাঁর কথা ও কাজে কার্যত স্পষ্ট। জানা গেল নিজের প্রধানের কাজ সামলে এভাবেই চাটায় বসে তাঁর দু সপ্তাহ কাটছে, যে কোনো দলের নেতার ক্ষেত্রে এটা প্রসংশার যোগ্য। প্রসঙ্গত, সুলতানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কথা উঠলেই বলতেই হয় এলাকার রাজনৈতিক ফ্যাক্টরের কথা।  ২০২১ এর বিধানসভা ভোটে ঘাটাল বিধানসভায় তৃণমূলের পরাজয়ের পিছনে সুলতানপুর অঞ্চলের ভোটের লিড বড় ফ্যাক্টর হয়েছিল।  এই পঞ্চায়েত এলাকার বেশ কিছু গ্রাম থেকে এত পরিমান ভোট বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছিল যে অন্য গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে শাসক দল এগিয়ে থাকলেও ২০২১ এ জয়ী হতে পরেনি তৃণমূল। ২০২১ এর পর ২০২৩ এর পঞ্চায়েত ভোটেও তৃণমূলকে পিছনে ফেলে গ্রাম পঞ্চায়েত বিজেপি দখল করতে পেরেছে। ২০১৯ এর পর থেকে এলাকায় বিজেপির ভোট অটুট রয়েছে। তাহলে কি রাজ্য রাজনীতির উর্দ্ধে উঠে ২০২৬ এর বিধানসভা ভোটেও ঘাটাল বিধানসভা এলাকার জয় পরাজয়ের কার্ডটা সুলতানপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেই ঘুরপাক খাচ্ছে ? ২০২১ এর মত সেই সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না! কয়েকটি ভোটের অঙ্ক বলছে, বিরোধীরা এলাকায় তাদের ভোটব্যাংক ধরে রেখেছে, অন্যদিকে  বর্তমানে সুলতানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কিছু  এলাকায় তৃণমূল কার্যালয় খোলাই হয়না। ২০১৯ এর লোকসভা ভোটের পর জনতার রোষে অনেকেই তৃণমূল ছেড়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে নিজের পেশায় মন দিয়েছেন। অনেক নেতা তাঁদের জনসমর্থন হারিয়েছেন। ওই এলাকায় সক্রিয় জনপ্ৰিয় কাউকে নতুন করে দলে টানতে পারেনি তৃনমুল। সম্প্রতি এমন কয়েকজনের মাথায় দল হাত রেখেছে যা সাধারণ ভোটাররা মোটেই পছন্দ করেন না বলে সূত্রের খবর। অন্যদিকে বিজেপি তার অভ্যন্তরিন সমস্যা মিটিয়ে মাঠে নেমে কাজ করতে চাইছে বলে দাবি দলের একাংশের। তাই আগামী বিধানসভা ভোটে সুলতানপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে শাসক বিরোধী উভয় দলের মাথা ব্যাথা থাকছেই।






 


নবীনতর পূর্বতন