মনসারাম কর, সাংবাদিক, (মো: ৯৬৪৭১৮০৫৭২): ওনাদের জীবন অনেক কষ্টের। মেয়ে,জামাই ,বাড়ি এবং সম্পত্তি সর্বস্ব চলে গেছে জীবন থেকে। এখন শুধু পেটে খাওয়া আর মাথাগুঁজে থাকার লড়াই। সর্বস্ব খুইয়ে শেষ বয়সে ঠাঁই হলো বৃদ্ধাশ্রম। লেখার শেষ পর্যন্ত পড়লে হয়তো সকলেরই মনে কষ্ট হবে। সেদিন ছিল চৈত্র সংক্রান্তির দিন। সাত সকালেই ঘাটালজুড়ে হা-হুতাশ। ৫০ লক্ষ টাকা দেনার দায়ে ঘাটালের ব্যবসায়ী দম্পতি গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন সকলেই। এই ঘটনার ভেতরে আরও অনেক দুঃখের কাহিনী রয়েছে এই লেখার মধ্যেই। জানা গেল, মৃত ব্যবসায়ী দম্পতির শ্বশুর- শ্বাশুড়ির বাড়ি ছিল কলকাতায়। তাঁদের নাম মিতা বসু এবং পরেশ চন্দ্র বসু। উভয়েরই বয়স ৭০ ঊর্দ্ধ। স্বচ্ছল পরিবার ছিল তাঁদের। কিন্তু মেয়ে-জামাইকে ব্যবসায় সাহায্য করতে নিজেদের বাড়ি বিক্রি করে সেই টাকা মেয়ে- জামাইকে দিয়েছিলেন। বাড়ি বিক্রির পর মেয়ে-জামাই ঘাটালের যে বাড়িতে ভাড়ায় থাকতেন, সেই বাড়িতেই চলে এসেছিলেন। কিন্তু ভাড়া বাড়িতে থাকা মেয়ে-জামাই এর মৃত্যু হয়েছে। এবার দিনযাপন হবে কিভাবে? বাড়ি ভাড়ার টাকা কোথা থেকে আসবে? একদিকে মনের ভেতরে স্বজন হারানোর কষ্ট, অন্যদিকে দুবেলা খাবেন কি? তার উপর ভাড়া বাড়িতে থাকতে গেলে টাকা দিতে হবে। মেয়ে-জামাই এর মৃত্যুর একমাস পর্যন্ত অন্যের সাহায্য নিয়ে দুবেলা চলছিল।কিন্তু এভাবে কতদিন চলবে? অবশেষে দুবেলা খাওয়া আর থাকার জন্য তাঁরা আজ বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই নিলেন। জানা গেছে ,কয়েকদিন আগে মিতাদেবী এসডিও অফিসে যান, সেখানে গিয়ে সুমনবাবুর কাছে প্রচুর কান্নাকাটি করছিলেন। বলছিলেন "কোলকাতায় আমার বাড়ি ছিল। সব বেচে জামাইকে টাকা দিয়েছিলাম। এখন আমি কোথায় যাব?" সেই কথা শুনে দাসপুরের নিম্বার্ক মঠের সরকারি বৃদ্ধাশ্রমে অসহায় বৃদ্ধ দম্পতিকে থাকার ব্যবস্থা করে দেন সুমনবাবু। আজ অফিসের গাড়িতে করেই সেই বৃদ্ধাশ্রমে পৌঁছালেন তাঁরা।
আসলে সকলের জীবনেই কম বেশি কষ্ট থাকে, কিন্তু এনাদের জীবন-ইতিহাস আরও যন্ত্রনার, আরও অনেক কষ্টের। ওনাদের এই কাহিনীর লেখা লিখতে লিখতে মনের আয়নাতে ওনাদের কষ্টটা উপলব্ধি করেছি। দুঃখ বেদনা নিয়েই বাকি জীবনটা কাটাতে হবে ওনাদের। তবে বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই পেয়ে খাওয়া আর থাকার সমস্যাটুকু মিটলো।